উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের বিকাশ ও সম্ভাবনা
ভূমিকাঃ চা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে সর্ব প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৮২৮ সালে। অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রামে কোদালায় জমি নেয়া হয় চা বাগান স্থাপনের।বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব, ১৮৪০ সালে সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে রোপণকরা হয় প্রথম চা গাছ। ব্রিটিশদের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ও পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। ১৮৬০ সালে হবিগঞ্জের লালচাঁন্দ চা বাগান ও মৌলভীবাজারের মির্তিঙ্গা চা বাগানে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন উদ্যোক্তারা। ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায়, ২০০৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে, ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও এর বালিয়াডাঙ্গী ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় এবং ২০১৪ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চায়ের চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশে চা শিল্পের বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৫৭-৫৮ সময়কালে তিনি চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিই চা বোর্ডের প্রথম বাঙালী চেয়ারম্যান। সে সময়ে চা শিল্পে মাঠও কারখানা উন্নয়ন এবং শ্রম কল্যাণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিগত তিন দশক ধরে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সেই হারে উৎপাদন বাড়েনি। বর্তমান সরকার রফতানি বাড়াতে পাট এবং চা শিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। ইতোমধ্যেবাংলাদেশ চা বোর্ডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক চায়ের ২৩টি উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ও গুনগতমানসম্পন্ন ক্লোন চা শিল্পে অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের ৬৫ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৯৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। যা দেশের চা শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্রমাগত নগরায়নের ফলে ও জনতার শহরমুখিতার কারণে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া সামজিক উন্নয়নের ফলে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। ফলে চায়ের রপ্তানি হঠাৎ করেই কমে গেছে। তারপরও জাতীয় অর্থনীতিতে চা শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। জিডিপিতে চা খাতের অবদান ০ দশমিক ৮১ শতাংশ। সমগ্র বাংলাদেশে চা আবাদির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে ১৭টি জেলা বিশেষ করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলের মধুপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭২ হেক্টর ক্ষুদ্রায়তনের চাষযোগ্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের বিকাশঃ দেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর পঞ্চগড় অন্যতম চা অঞ্চল হিসেবে এরই মধ্যে দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। পঞ্চগড় ইতোমধ্যে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একসময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি ও দেশের সবচেয়ে অনুন্নত জেলা এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে চোখ জুড়ানো নৈসর্গিক সৌন্দর্য। দেশের বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে পঞ্চগড়ের চা। হিমালয় কন্যা খ্যাত সবুজ শ্যামলে ঘেরা দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফরে এসে চা চাষের সম্ভাবনার কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল আজকের পঞ্চগড়ের চা বাগান। অতঃপর ওই সময়ের জেলা প্রশাসক জনাব মো. রবিউল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ করা হয়। প্রথমে টবে, পরে জমিতে চায়ের চাষ করা হয়। সে সফলতা থেকে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন করা হয়। ১৯৯৯ সালে উত্তরবঙ্গে চা চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ দল পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় জরিপ চালিয়ে চা চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। জরিপ কমিটি পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ৪০,০০০ একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম তেতুলিয়া টি কোম্পানী লিমিটেড (টিটিসিএল) এবং কাজী এন্ড কাজী চা বাগান বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে পঞ্চগড় জেলায় সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু করেন জনাব মোঃ ইসহাক আলী মণ্ডল, জনাব মোঃ আব্দুর রহমান, জনাব মোঃ আব্দুল হক, জনাব মোঃ মতিয়ার রহমান, জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, জনাব আমেনা খাতুন এবং জনাব মোঃ আবুল হোসেনসহ ছয় থেকে সাতজন ক্ষুদ্র চাষি চা চাষ শুরু করেন। সেই থেকে হাটি হাটি পা পা করে পঞ্চগড়ের চা আজ ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে।
২০০১ সালে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের উন্নয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চা বোর্ডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর একটি উপকেন্দ্র পঞ্চগড়ে স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে যা বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ড এর আঞ্চলিক কার্যালয়ে ১ একর জমিতে চায়ের পরীক্ষণ প্লট, ১ একর মাতৃগাছ ও ৫ লক্ষ চা চারা উৎপাদনক্ষম একটি ভিপি নার্সারী রয়েছে। এছাড়াও এ কার্যালয়ে ১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ১টি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট গবেষণাগার ও ১টি আইপিএম ফিল্ড ল্যাবরেটরী রয়েছে। উত্তরবঙ্গের চায়ের উৎপাদন ও গুণগতমান বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চা বোর্ড ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়াও প্রতি বছরই বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীরা পঞ্চগড়ের চা চাষিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক পন্থায় চা চাষের কলাকৌশল হাতে কলমে শেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রকারের প্রশিক্ষনের আয়োজন করে থাকেন। এতে করে চা চাষিরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি পঞ্চগড়ের চা চাষ আরও বেগমান হচ্ছে। ফলে এর উপকারিতা পঞ্চগড়ে চা চাষে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫,০০০-৩০,০০০ লোক সহ হত দরিদ্র নারী ও পুরুষ সকলেই পাচ্ছে। সে কারনে পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ডের এই আঞ্চলিক কার্যালয়টি পঞ্চগড়ের লোকজনদের নিকট চায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। পঞ্চগড়ে চা চাষের যে বিপ্লব ঘটেছে তা মূলত বাংলাদেশ চা বোর্ড তথা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এ নিয়োজিত বিজ্ঞানীবৃন্দ ও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিরলশ কর্ম প্রচেষ্টায়। যার ফলে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের এই অবহেলিত অঞ্চল মঙ্গা নামক অভিশাপ্ত শব্দটিকে জয় করতে পেরেছে। এতে করে এই উত্তরের জনপদটি যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে তেমনি এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিক ভাবে অন্যতম চালিকা শক্তিতেও রূপান্তরিত হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের চায়ের পরিসংখ্যানিক তথ্যঃ ২০২০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট জেলায় ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগানের এবং ৭,৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের মোট ১০,১৭০ একর জমিতে ৫,১২,৮৩,৩৮৬ কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা এবং ১৮টি চলমান চা ফ্যাক্টরীতে মোট ১,০৩,১০,০০০ কেজি তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় উত্তরবঙ্গে ২০২০ সালে ১,৪৯০ একর জমি নতুন করে চা চাষের আওতায় এসেছে এবং তৈরি চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ৭.১১ লক্ষ কেজি। বিগত সকল বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড এ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলায় ৯টি চা বাগান (>২৫ একর), ৯৯৮ জন ক্ষুদ্র চা চাষি (<২৫ একর); ঠাকুরগাঁও জেলায় ১টি চা বাগান (>২৫ একর), ৩৫৭ জন ক্ষুদ্র চা চাষি (<২৫ একর); নীলফামারি জেলায় ৩২ জন ক্ষুদ্র চা চাষি (<২৫ একর), লালমনিরহাট জেলায় ৯৭ জন ক্ষুদ্র চা চাষি (<২৫ একর) ও দিনাজপুর জেলায় ২৬ জন ক্ষুদ্র চা চাষিকে (<২৫ একর) অর্থাৎ মোট উত্তরবঙ্গে ১০ টি চা বাগান ও ১,৫১০ জন ক্ষুদ্র চা চাষিকে নিবন্ধন প্রদান করেছে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫টি ক্ষুদ্র চা চাষি সমবায় সমিতিকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক পঞ্চগড়ে ২০টি ভিপি চা নার্সারী নিবন্ধিত হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক বর্তমানে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটে মোট ৩২টি চা কারখানাকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে বর্তমানে ১৮টি চা কারখানা চলমান আছে।
বর্তমান সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্রঃ
চা চাষিদের জীবনমান উন্নয়নঃ প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৬ সহস্রাধিক ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছে। তন্মধ্যে ১১৬০ জন ক্ষুদ্র চাষি নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় নিবন্ধিত। উক্ত চাষিরা প্রকল্প থেকে স্বল্পমূল্যে চা চারা, কৃষি ইকুইপমেন্ট যথা- প্রুনিং নাইফ, স্প্রে মেশিন, হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক উপায়ে চা আবাদের ফলে তাঁরা উপকৃত হচ্ছেন। জেলায় যেসব জমিতে চা আবাদ হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশই পূর্বে অনাবাদি ছিল। চাষিরা চা চারা রোপণের ১-২ বছর পর থেকেই চা পাতা সংগ্রহ করে কারখানায় বিক্রি করতে পারে। বছরে ৯ মাস পর্যন্ত নিয়মিত চা পাতা সংগ্রহ করে বিক্রি করা যায়। সৃজিত চা বাগান থেকে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর কাঁচা পাতা চয়ন করা যায়। একবার চা গাছ লাগালে ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বছর জমি চাষ ও চারা রোপণের ঝামেলা না থাকায় খরচ কম হয়। পঞ্চগড়ে চা চাষের ফলে অত্র এলাকার ১৮,০০০-২০,০০০ জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কৃষকই চা চাষের আগে দরিদ্রসীমার নিচে জীবনযাপন করতো। ক্ষুদ্র কৃষকের বছরে একর প্রতি প্রায় ১০,০০০ কেজি কাঁচা পাতা উৎপাদন করে ২-৩ লক্ষ টাকার কাঁচা পাতা বিক্রি করে আয় হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন ও তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। বাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু পতিত জমিতে চা চাষ করে প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও হচ্ছে। অনেক কৃষক চা আবাদের আগে যারা কাঁচা ঘরে থাকতো আজ তাঁরা পাকা ঘরে থাকছে। তাঁদের সন্তানেরা আজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমাজে তাঁদের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দিন দিন চা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
উপসংহারঃ চা একটি দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক ফসল। উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহের মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে চা শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়সহ ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারি ও দিনাজপুরে উঁচু সমতল ভূমিতে অর্থকরী ফসল সবুজ চা চাষ এগিয়ে যাচ্ছে। এতে জেলার চিত্র গত কয়েক বছর আগের তুলনায় পাল্টে গেছে কয়েক গুণ। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে চা উৎপাদনের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ শিল্পকে সঠিকভাবে তদারকি করতে পারলে দেশের জাতীয় অর্থনীতি আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয় তার বিশেষ একটি অংশ উত্তরবঙ্গ থেকে আসে। এতে করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে। অপরদিকে এ শিল্পের কারণে দেশের বেকার সমস্যার কিছুটা লাঘব হচ্ছে। এবারের মৌসুম শেষে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরে উত্তরবঙ্গে চায়ের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক। চায়ের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। ভবিষ্যতে চা শিল্পের বিকাশ এবং রফতানি বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে উন্নয়নের একটি পথ-নকশা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের চা শিল্পকে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চা-শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। আশা করা হচ্ছে, চা-শিল্প তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও এর চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে চা-চাষের পরিমাণ বাড়লে একদিকে যেমন আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল হবে, অপরদিকে বেকার লোকের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসবে। তবে চা চাষের ক্ষেত্রে এর গুণগতমান বজায় রেখেই উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে চাষিদের সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ঠ নির্ভেজাল ও নিরাপদ পানীয় এ চায়ের চাষ বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।